রিচার্জ করতে গেলে নম্বর না বলে ব্যক্তির নাম বললেই টাকা চলে যায় মোবাইলে।

সিটিজি ভয়েস টিভি ডেস্ক:

 

আত্মবিশ্বাস ও প্রবল স্মরণশক্তির মাধ্যমে প্রায় পাঁচ হাজার মোবাইল নম্বর মুখস্থ বলতে পারেন তিনি। অবাক করার বিষয়- এলাকার পরিচিত মানুষের সকল মোবাইল নম্বর তার মুখস্থ। রিচার্জ করতে গেলে নম্বর না বলে ব্যক্তির নাম বললেই টাকা চলে যায় মোবাইলে।

বলছিলাম মিজানুর রহমানের কথা। জন্ম থেকে তার দুই চোখই অন্ধ। বয়স ২৫ বছর।

কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল টাঙ্গারিপাড়া গ্রামে জন্ম। বাবার নাম মোনতাজ আলী ও মায়ের নাম মোমেনা খাতুন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট বোন মরিয়মের বিয়ে হয়েছে।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। এ দুঃখ তাকে ক্ষতবিক্ষত করে। তাই বাধ্য হয়ে টাকা উপার্জনের পথে নামেন। কিন্তু শুরুর দিকে তাকে নানা অবহেলার শিকার হতে হয়।

শেষপর্যন্ত মেধা ও স্মরণশক্তি দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেন। এখন তিনি মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করে অতিকষ্টে পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করছেন। অর্থ সংকটে ব্যবসার পুঁজি বৃদ্ধি করতে পারছে না অন্ধ মিজানুর।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রিচার্জ করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে মিজানের। দীর্ঘ দিন ধরে এ কাজ করলেও একবারও ভুল করেনি। মোবাইল নম্বর তার লিখে রাখার প্রয়োজন হয় না। পুরো দিনের হিসাব মুখস্থ থাকে তার।

মিজানুর রহমান বলেন, কোন বাটনে কোন সংখ্যা এটা মোবাইল সেটের উপর হাত রেখে বলে দিতে পারি। ব্যবহার করতে করতে আমার সব জানা হয়ে গেছে। রিচার্জ করতে মোবাইলে কোন বাটন টিপতে হবে, কোন অপশনে যেতে হবে-সেটাও আমার জানা হয়ে গেছে।

বিকাশ বা রকেটে টাকা পাঠাতে কোন সমস্যা নেই। শুধু ইনকামিংয়ের ক্ষেত্রে আমাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি হট লাইনে কথা বলে নিশ্চিত অথবা অন্য কারো সহযোগিতা নিতে হয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন, আমার অন্ধ দুই চোখের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করলে পৃথিবীর আলো দেখতে পারবো। অর্থ উপার্জন করে বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভরণপোষণে সহযোগিতা করতে পারবো। অমি ভিক্ষা করে বাঁচতে চাই না।

রৌমারী উপজেলার টাপুরচর বাজারে দোকানদার জিয়াদ আহমেদ বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতোই মিজান কাজ করছে। গ্রাহকদের সঙ্গে টাকা লেন-দেনে কোন ঝামেলার ঘটনা আমি দেখিনি।

দোকান ঘর মালিক চাঁন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি যখন জানতে পারি অন্ধ মিজান টাকা রিচার্জ করতে পারে। আর তার কোন সহায় সম্বল নেই, তখন এই বাজারে আমার একটা দোকান ঘর তাকে ভাড়া ছাড়া ব্যবসা করার জন্য দিয়েছি। সে যতদিন বেঁচে থাকবে ততো দিন তার কাছে ঘরভাড়া বাবদ কোন টাকা নিবো না।

মিজানের বাবা মোনতাজ আলী বলেন, সে জন্ম থেকেই অন্ধ। চিকিৎসার জন্য তাকে উলিপুর, রংপুর ও দিনাজপুর চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেছি। চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার চোখের অপারেশন করতে চেয়েছিল, কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে অপারেশন করা সম্ভব হয়নি।

বন্দবেড় ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কবীর হোসেন জানান, এ বিষয় আমি জানি না। তবে খোজ নিয়ে আমার পরিষদ থেকে যতটুকু সাহায্য করার দরকার আমি তা করবো।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার স্মৃতি বলেন, অন্ধ মিজানুরের বিষয় নিয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পেলে অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করা হবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, মিজানকে ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।

 

মতামত