সিটিজি ভয়েস টিভি ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবীই যখন স্তব্ধ, দৈনন্দিন জীবনে খেটে-খাওয়া মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো যখন চিন্তায় অস্থির, সংকোচের বৃত্তে বন্দী মধ্যবিত্তরা যখন আরো বেশি অসহায়।
ঠিক এ দুঃসময়ে নগরবাসীর পাশে দাঁড়ালেন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলমান দুর্যোগে নগরবাসীর জন্য ইতোমধ্যে সরকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দুই দফায় ৪০ মেট্রিক টন চাল এবং দুই লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
ইতোমধ্যে এসব চাল এবং অর্থ শহরের ৪১ টি ওয়ার্ডে সাধারণ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৫৫ জন কাউন্সিলরের মাধ্যমে বণ্টন করেছেন। তবে সরকারি এসব বরাদ্দ বিলি করেই বসে নেই মেয়র।
প্রতিদিন নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বিতরণ করছেন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য এবং নগদ অর্থ। মেয়রের ঘোষণা, যতদিন সামর্থ্য থাকবে এবং চলমান সংকট যতদিন দূর না হবে ততদিন পর্যন্ত নগরবাসীর পাশে থাকবেন। মেয়রের প্রত্যাশা শহরের একটি মানুষও যেন অভুক্ত না থাকে।
মেয়রের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার পরিবারের জন্য খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট তৈরি করেছেন মেয়রের তহবিল থেকে। এর মধ্যে গতকাল বিকেল পর্যন্ত চার হাজার ৪৯২ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আজ নতুন করে আরো দুই হাজার পরিবারের জন্য খাদ্যপণ্য প্যাকেট করার জন্য ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রতি প্যাকেটে চাল, আলু, মসুর ডাল এবং লবণ রয়েছে। এসব খাদ্যপণ্য মেয়র স্থানীয় কাউন্সিলর, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক কর্মীর মাধ্যমে বিতরণ করছেন। এক্ষেত্রে বাসায় বাসায় খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন মোড়ে গাড়ি থামিয়ে নিম্নবিত্ত বিশেষ করে ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, ভবঘুরের মাঝে বিতরণ করছেন নগদ অর্থ।
মানবিক এ সহযোগিতা প্রসঙ্গে মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, এ মুহূর্তে মানবিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমার চাওয়া, শহরে যারা আছেন তাদের একজনও যেন অভুক্ত না থাকে। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে দিচ্ছি এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে আমার যারা শুভকাঙ্খী আছেন তারাও দিচ্ছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারে খাদ্যপণ্য বণ্টন করা হয়েছে।
মেয়র বলেন, আরো প্যাকেট তৈরি করার জন্য বলে দিয়েছি, কত পরিবারের মধ্যে বণ্টন করার লক্ষ্য আছে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, চলমান দুর্যোগ থেকে কবে রক্ষা পাব সেটা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানেন। আল্লাহ পাক যতদিন এই দুর্ভোগ থেকে আমাদের উদ্ধার করবেন না ততদিন সহযোগিতা করে যাব ইনশাল্লাহ। যতক্ষণ সামর্থ্য থাকবে মানুষের পাশে দাঁড়াবো। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান যারা আছেন তাদের প্রতিও আহ্বান জানাবো তারাও যেন এ দুর্যোগের সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
মেয়র বলেন, ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দিলেও তা কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বণ্টন করছি। এবং এলাকার অনেকগুলো সামাজিক সংগঠন আছে তাদের মাধ্যমেও দিচ্ছি। কাউন্সিলর এবং সামাজিক সংগঠনগুলো নিজ নিজ এলাকার লোকজন সম্পর্কে অবগত আছেন। তাই তারা যার সাহায্য প্রয়োজন তার হাতে তুলে দিতে পারবেন। এলাকার অনেকেই আছেন যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন কিন্তু বের হতে পারছেন না। তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। বলে দিয়েছি, বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য।
মেয়র বলেন, সরকারের খাদ্য সাহায্য বণ্টনে কোনো ধরনের অনিয়ম যদি পাওয়া যায় সে যেই হোক না তার রক্ষা নেই। আহ্বান থাকবে মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন অর্থশালী-সম্পদশালী হয়ে উঠার অপচেষ্টা না করে।
মেয়র বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সচেতনতার উপর জোর দিচ্ছি। চীনের উহানে যখন প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় তার একদিনের দিনের মধ্যে আমরা জরুরি সভা করেছিলাম। ওই সময়ে সচেতনতামূলক এক লক্ষ লিফলেট বিতরণ করি। কন্ট্রোল রুম খুলেছি। বর্তমানে সরকার ১১ এপ্রিল পর্যন্ত যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে এই সময়ে নগরবাসীকে নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে অবস্থান করতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে শহরে জীবাণুনাশক ছিটানো অব্যাহত রেখেছি।
মেয়রের ব্যক্তিগত খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩৩নং ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুই দফায় সরকারি বরাদ্দ পেয়েছি। প্রথমবার প্রতি ওয়ার্ডে ৮০ পরিবার এবং দ্বিতীয়বার ৭৮ পরিবারের জন্য। দুইবারই প্রতি পরিবারের জন্য পাঁচ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে সরকারি বরাদ্দের সঙ্গে মেয়র মহোদয়ের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এক কেজি করে ডালও যুক্ত করেছি। দ্বিতীয়বার সরকারি বরাদ্দে চালের সঙ্গে নগদ টাকাও ছিল। তবে আমরা টাকার পরিবর্তে অন্যান্য উপকরণ আলু ও পেঁয়াজ কিনে দিচ্ছি। আমার ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে আমার মাধ্যমে ১০০ পরিবারে বণ্টন করা হয়েছে। এর বাইরে প্রয়োজন হলে আরো দেয়ার কথা বলেছেন। আমার নিজের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও এক হাজার দুইশ’ পরিবারে বণ্টন করেছি।
মেয়রের খাদ্যপণ্য বিতরণ কাজে নিয়োজিত মহিউদ্দিন আলী নূর বলেন, প্রথমবার তিন হাজার পরিবারের জন্য খাদ্যপণ্যের প্যাকেট করি। এগুলো শেষ হওয়ার আগে আরো দুই হাজার পরিবারের জন্য প্যাকেট করি। সবমিলিয়ে পাঁচ হাজার প্যাকেটের মধ্যে আজ (গতকাল শুক্রবার) পর্যন্ত আর মাত্র ৫০৮ প্যাকেট অবশিষ্ট আছে। কাল (আজ) সেগুলোর বেশিরভাগ শেষ হয়ে যাবে। মেয়র আমাকে বলেছেন, ৫শ’ প্যাকেট অবশিষ্ট থাকতে তাকে জানাতে। আজ জানিয়েছি। আবার নতুন করে দুই হাজার প্যাকেট তৈরি করতে বলেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চলমান করোনা পরিস্থিতির প্রথমদিন থেকেই মাঠে আছেন আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। কেবল মেয়র হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দিয়েই দায় সারেননি। বরং নিজেই মাঠে নেমে পড়েছেন। কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন। কাউন্সিলরদের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করে দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। কঠোরভাবে বলে দিয়েছেন, এখনই উপযুক্ত সময় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার।