আবদুল আউয়াল জনি, সিটিজি ভয়েস টিভি:
গোটা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। একইসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এমন অবস্থায় প্রতিদিন পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-বিআইটিআইডি’তে কিটের উপকরণ সংকট দেখা দেয়। কোভিড-১৯ পরীক্ষা বন্ধের উপক্রম হয়। আর এমন সময় এগিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের দুই নেতা। নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছেন এমন সংকট সমাধানে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার হস্তক্ষেপে চট্টগ্রামের জন্য আরও ১৯২০টি রি-এজেন্টসহ কিট পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরে চট্টগ্রামের জন্য আরও পাঁচ হাজার কিটের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ১৯২০টি রি-এজেন্টসহ কিট গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর তার গাড়িতে করে সেগুলো বিআইটিআইডিতে পাঠানো হচ্ছে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ৯৫০ কিট এলেও তা দিয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাচ্ছিল না। আনুষঙ্গিক উপাদান সংকটের ফলে এসব কিট দিয়ে সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা সম্ভব নয় বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
তিন দিন যাবৎ চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ও সিভিল সার্জন কিট আসবে বলে জানালেও তা ঢাকা থেকে কখন আসবে জানাতে পারেননি। তাদের পারস্পরিক তথ্যও ছিল অস্পষ্ট। তারা কেউ জানিয়েছিল, কিট সংকট নেই। আবার কেউ বলেছে, পরীক্ষা বন্ধ হবে না। যথেষ্ট কিট আছে। আবার অনেক কর্মকর্তা জানান, উপাদানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিট সংকটের বিষয়টি উঠে আসলেও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিদিনই গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছে ‘কিট পথেই ,চলে আসবে’। সুনির্দিষ্ট করে তারা কেউ কোনো উত্তর দিতে পারেনি। বৃহস্পতিবার বিকেলেও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কিট এসে কখন পৌঁছাবে তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি। যা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল চরমে।
বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, যেসব কিট পেয়েছি সেগুলো অসম্পূর্ণ ছিল। এগুলো দিয়ে কাজ করা যাচ্ছিল না। কিন্তু আমাদের এখানে ল্যাবরেটরিতে কিছু উপাদান থাকায় সেগুলোকে ব্যবহার করে আমরা কাজ চালাচ্ছিলাম।
কিট আসার তথ্য নিশ্চিত করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও করোনা বিষয়ক সমন্বয় সেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান সিটিজি ভয়েস টিভিকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্য্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া চট্টগ্রামে কিট সংকটের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে পরীক্ষা বন্ধের শংকার কথাও তুলে ধরেন। এ আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য)’র সাথে ফোনে কথা বলে জরুরী ভিত্তিতে কিট প্রেরণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। উপমন্ত্রী নওফেলও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি নিজে স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়ে কিট সংগ্রহ করেন। এর ফলে আপাতত কিট সংকটের কোনো আশঙ্কাই থাকল না।
উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সিটিজি ভয়েস টিভিকে বলেন, আগে ৯৬০টি কিট বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এর সঙ্গে রি-এজেন্টসহ আনুষাঙ্গিক ইক্যুইপমেন্ট ছিল না। ফলে সেগুলো অব্যবহৃত থাকায় কিট সংকটের কথা বলা হচ্ছিল। জরুরি কাজ থাকায় আমি চট্টগ্রামে এগুলো নিয়ে যেতে পারছি না। তাই রিসিভ করে ব্যক্তিগত গানম্যানকে সঙ্গে দিয়ে কিটগুলো চট্টগ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। কিটগুলোর প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিয়েই আমার গাড়িতে তোলা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) রাতের মধ্যেই এগুলো চট্টগ্রামে বিআইটিআইডি’র ল্যাবে পৌঁছে যাবে।এবার রি-এজেন্টসহ কিট পাঠানো হয়েছে। আগের কিটগুলো দিয়েও নমুনা পরীক্ষা হবে। এছাড়া আমি স্বাস্থ্য অধিদফতরে আরও ৫ হাজার কিটের চাহিদাপত্র দিয়েছি। সেটা আগামী সপ্তাহের শেষে পেতে পারি।