ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানছে বাংলাদেশেই, তের জেলায় ৭ নম্বর বিপদসংকেত

সিটিজি ভয়েস টিভি ডেস্ক:

আবহাওয়া বিভাগ বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। সকাল থেকেই উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এমনকি বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাতেও।

সিত্রাং নামের এই ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মঙ্গলবার ভোরবেলা বাংলাদেশের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত এলাকা দিয়ে (খেপুপাড়া) বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বিবিসিকে বলেছেন, ভোরে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করলেও এর অগ্রভাগ মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে আগেই, মধ্যরাতের দিকে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটি যে বাংলাদেশ দিয়েই অতিক্রম করবে এটা নিশ্চিত, কারণ এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ বাংলাদেশর উপকূলে চলে এসেছে।

তবে এটি ‘সুপার সাইক্লোন’ হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুর রহমান রবিবার বলেছিলেন, এটি ‘সুপার সাইক্লোন’ হতে পারে।

কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, সিত্রাং এখন একটি ‘সাইক্লোনিক স্টর্ম’ অবস্থায় আছে, মঙ্গলবার ভোরবেলা নাগাদ এটি ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

বঙ্গোপসাগরের একটি নিম্নচাপ রবিবার সন্ধ্যে নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়।

আগেই ঠিক করে রাখা একটি তালিকা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টির নাম হয় সিত্রাং।

কোথায় কী ধরণের বিপদের আশঙ্কা:
এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করা শুরু করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

দুপুরে প্রকাশিত সবশেষ বুলেটিনে বলা হচ্ছে, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত জারি করা হয়েছে।

এছাড়া তেরটি জেলা ও জেলাগুলো সংলগ্ন দ্বীপগুলোকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

জেলাগুলো হচ্ছে:

১. সাতক্ষীরা

২. খুলনা

৩. বাগেরহাট

৪. ঝালকাঠি

৫. পিরোজপুর

৬. বরগুনা

৭. পটুয়াখালী

৮. ভোলা

৯. বরিশাল

১০. লক্ষ্মীপুর

১১. চাঁদপুর

১২. নোয়াখালী

১৩. ফেনী

জেলাগুলোর নদীবন্দরগুলোকে তিন নম্বর সতর্কসংকেত দেখানো হচ্ছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে দেখাতে বলা হয়েছে ৬ নম্বর বিপদসংকেত। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপগুলোকেও দেখানো হচ্ছে ৬ নম্বর বিপদসংকেত।

এই পনেরটি জেলাতেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছাস হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জলোচ্ছাসের উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে আবহাওয়ার সবশেষ বুলেটিনে।

এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশালের বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌরুটের সব ধরণের যানবাহন চলাচল।

মাছ ধরা ট্রলারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে সব ধরণের পাবলিক পরীক্ষা।

এরই মধ্যে পনেরটি জেলায় জরুরীভাবে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এসব এলাকায় মাইকিং করে মানুষজন ও গবাদীপশুকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান একটি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, সরকারিভাবে সাত হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সব মিলে সরকারের ২৫ লাখ মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন মি. রহমান।

মতামত