ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
×

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রাজনৈতিক হামলা: সন্তানকে না পেয়ে পিতাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}

পুরো পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দূর্বৃত্তদের

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চলে আসা পারিবারিক ঝগড়াকে রাজনৈতিক রুপ দিয়ে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টির) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী দূর্বৃত্তরা। এসময় হামলাকারীরা জয়নুল আবেদীন রিয়াজ ও তাঁর ছোটভাই মাসউদ আযহারকে খুজতে থাকে তাঁদের খুঁজে না পেয়ে তাঁদের পিতা হাফিজুর রহমানকে লোহার রড, হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে দূর্বৃত্তরা জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এর বাড়ি লক্ষ্য করে ৮/১০টি ককটেল এর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৪০/৫০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পুরো পরিবারের সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এর পিতা হাফিজুর রহমানকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার (৫ই নভেম্বর) রাত আনুমানিক ৯টার সময় সাতকানিয়া উপজেলার ১৬নং সাতকানিয়া সদর ইউপির করইয়া নগর ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মৌলভী পাড়ায় উক্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম ভুট্টু।

ঘটনার খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শাহরিন এর নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মোতালেব এর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত কালা ফারুক, গালকাটা ওসমান, সাইফুল ইসলাম সুমন (প্রকাশ বাইট্টা সুমন) সহ ১৫/২০ জনের একদল সন্ত্রাসী পিস্তল, এলজি, লম্বা বন্দুক, লোহার রড, হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টির) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এর বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা জয়নুল আবেদীন রিয়াজ ও তাঁর ছোটভাই মাসউদ আযহারকে খুজতে থাকে তাঁদের খুঁজে না পেয়ে তাঁদের পিতা হাফিজুর রহমানকে বাড়ির ভেতর থেকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির উঠানে বের করে লোহার রড, হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে বেধড়ক ভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে দূর্বৃত্তরা জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এর বাড়ি লক্ষ্য করে ৮/১০টি ককটেল এর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৪০/৫০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পুরো পরিবারের সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এর পিতা হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বাড়ির অদূরে রাস্তার পাশে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১ কানি জায়গা দীর্ঘ ৪০/৫০ বছর থেকে আমার নিজের দখলে আছে, সেখানে আমি পেঁপে ও কলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির বাগান করেছি সেই জায়গাটি আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব এর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও সন্ত্রাসীদের গডফাদার নাজিম উদ্দীন জোর করে কয়েক দফা দখল করতে চেয়েছে। আমার দুই ছেলে জয়নুল আবেদীন রিয়াজ ও  মাসউদ আযহার স্থানীয়দের সাথে নিয়ে তাঁদের এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। পাশাপাশি আমার বড় ছেলে জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এবি পার্টির রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহন করার পর থেকেই মুলত আমার পরিবার আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব এর পালিত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হয়েছে। আমার বাড়িতে কয়েক দফা হামলা, ছেলেদের উপর হামলা, দুই ছেলে ও ছেলের বউকে অনেকগুলো মিথ্যা মামলার আসামী করার কারণে আমার দুই ছেলেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। সর্বশেষ আমার ছেলেদের না পেয়ে আমার উপর হামলা চালিয়ে আমাকে রক্তাক্ত জখম করেছে। আমরা পুলিশের কাছে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি উল্টো আমাকে গালমন্দ করেছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তফা কামাল খান গণমাধ্যমকে বলেন, জয়নুল আবেদীন রিয়াজ ৬টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী, দীর্ঘদিন ধরে আমরা তাঁকে খুজছি। তাঁর বাড়িতে ও তাঁর পিতার উপর হামলার ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। প্রাথমিক ভাবে তদন্তে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে উক্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। উক্ত ঘটনার বিষয়ে মামলা দায়ের করতে গেলে কেন জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এর পিতা হাফিজুর রহমানকে গালমন্দ করা হয়েছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ৬টি মামলার এজাহারভূক্ত পলাতক আসামীর পিতাকে গালমন্দ না করে কি আদর করব নাকি? জয়নুল আবেদীন রিয়াজকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়েছে এমন দাবীর বিষয়ে ওসি বলেন, সত্য-মিথ্যা জানিনা আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে, আসামীরা যেখানেই থাকুকনা কেন তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ১৬নং সাতকানিয়া সদর ইউপির করইয়া নগর ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মৌলভী পাড়া এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজের উপর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১ টার সময় এবি পার্টির দলীয় কার্যালয়ে দূর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে, পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং কাউন্সিলর নির্বাচন চলাকালিন দূর্বৃত্তের গুলি থেকে অল্পের জন্য বেচে গেলেও তার সহকর্মীর মৃত্যু হয়। তখন থেকেই জয়নুলকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। মামলা ও হয়রানির ভয়ে আনুমানিক এক বছর আগে তিনি কানাডায় পালিয়ে যান।

সাতকানিয়া থানার তথ্যমতে জয়নুল আবেদীন রিয়াজ এর বিরুদ্ধে সর্বমোট ৬টি মামলা রয়েছে। যার একটি নগরীর কোতোয়ালি থানায় গত ৩০ মার্চ ২০২১ ইং তারিখে দায়েরকৃত ৩২৩/২০২১ নং মামলা। অপর মামলা দুটি হল চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের হওয়া গত ২৮ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখের ২২৮/২০২২ ও ২৭ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখের ৫২২/২০২২ ইং। এসব মামলা  ছাড়াও কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নাশকতায় জড়িত দেখিয়ে নাশকতা ও ভাংচুরসহ গত ২৫ ও ২৬শে জুলাই ২০২৪ইং সাতকানিয়া থানায় দায়েরকৃত ৩টি মামলার আসামি হিসেবে তাঁর নাম যুক্ত করে পুলিশ। সাতকানিয়া থানার তৎকালীন সেকেন্ড অফিসার এসআই মোস্তাক আহমদ সাব্বির বাদী হয়ে জয়নুল আবেদীন রিয়াজসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০০/৬০০ জনকে আসামি করে ২টি এবং তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু বক্কর বাদী হয়ে ১টি মামলা দায়ের করেন। সবগুলো মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত রিপোর্ট