ই-পেপার | শুক্রবার , ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
×

ইউপি নির্বাচন: সাতকানিয়ায় কেন্দ্র দখল, সংঘর্ষ-গোলাগুলি, ২ জন নিহত

এবি পার্টির স্বতন্ত্র ইউপি সদস্যকে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

সিটিজি ভয়েস টিভি ডেস্ক:

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালীন সময়ে সোমবার ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ দুপুরে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের করইয়া নগর উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিরোধী দলীয় এবি পার্টির মনোনীত বই মার্কার ইউপি সদস্য প্রার্থী তুমুল জনপ্রিয় নেতা জয়নুল আবেদিন রিয়াজ এর উপর সরকার দলীয় লোকজন এবং পুলিশের সহায়তায় হামলা চালায় এবং কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষন করে এসময় রিয়াজের সমর্থকরা তাঁকে রক্ষা করতে পারলেও রিয়াজকে লক্ষ্য করে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তাসিফ নামের এক কিশোর নিহত হন।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব তালুকদার বিরোধী দলের প্রার্থীর উপর হামলা এবং কিশোর তাসিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় সাতকানিয়া সদর এবং বাজালিয়ায় এক কিশোরসহ দুজন নিহত হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে হটাৎ বহিরাগতদের হামলায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

এর আগে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কিছু সময় পর সকাল ১০টার দিকে উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতার হোসেন ও স্বতন্ত্র মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী জসিম উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়।

সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুকসহ পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক দল তারা কেন্দ্র দুটিতে সাময়িকভাবে ভোট বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন জেলা পুলিশ সুপার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

খবর নিয়ে জানা যায়, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বই প্রতিকের ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী জয়নুল আবেদিন রিয়াজ এর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক বেশি এবং তিনি আমার বাংলাদেশ পার্টি তথা এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, তার ভোট কেন্দ্র দখল করার জন্য সরকারী দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড আবু রেজা মুহাম্মাদ নেজামউদ্দিন নদভী এমপি এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে জয়নুল আবেদিন রিয়াজকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন এমপি। আবু রেজা নদভী এমপি সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল জলিলকে বলেন সরকারি দলের সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া কেউ যদি বিজয়ী হয় তাহলে এর দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে এবং যেকোনো মুল্যে সরকারি দলের সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। এমপির এই ধরনের নির্দেশের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায় সরকার দলীয় লোকজন পুলিশের সহায়তায় বিরোধী দলীয় এবি পার্টির মনোনীত বই মার্কার ইউপি সদস্য প্রার্থী জয়নুল আবেদিন রিয়াজ এর উপর হামলা চালানোর পাশাপাশি তাঁকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়, এসময় রিয়াজ এর সমর্থকরা তাঁকে রক্ষা করতে পারলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তাসিফ নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, দুই কেন্দ্রে সাময়িক ভোট বন্ধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পেলে স্থায়ীভাবে ভোট বন্ধ করা হবে।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুল জলিল জানান, ভোটকেন্দ্রে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এর আগে সোমবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয় সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা, পুরানগড়, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, কেঁওচিয়া, ঢেমশা, মাদার্শা, আমিলাইশ, কাঞ্চনা, নলুয়া, খাগরিয়া, চরতি, পশ্চিম ঢেমশা সোনাকানিয়া ও সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নে। এর মধ্যে পুরানগড়, মাদার্শা, কেঁওচিয়া ও সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন।